এক দরিদ্র ব্যক্তি প্রতিদিন তার মনিবের ঘরে পানি নিয়ে যাওয়ার কাজ করতো।
এক দরিদ্র ব্যক্তি প্রতিদিন তার মনিবের ঘরে পানি নিয়ে যাওয়ার কাজ করতো।
সে একটি লাঠির দুই প্রান্তে পানির পাত্র ঝুলিয়ে তা কাঁধে নিয়ে রোজ অনেকটা পথ হেঁটে পাড়ি দিতো।
দুটি পাত্রের একটিতে কিছুটা ফাটল ছিলো, আরেকটি ছিলো সম্পূর্ণ ত্রুটিহীন।
মনিবের বাড়ী পর্যন্ত পৌঁছাতে পৌঁছাতে ফাটল ধরা পাত্রটির অর্ধেক পানি পড়ে যেতো।
এভাবে দুটি বছর ভালো পাত্রটি প্রতিদিন পাত্রভর্তি পানি দিলো আর ফাটল ধরা পাত্রটি প্রায় অর্ধেক পরিমাণ পানি দিতে সক্ষম হলো।
এতে ভালো পাত্রটি তার কাজের জন্য গর্ব বোধ করতো।
অন্যদিকে ফাটল ধরা পাত্রটি তার অসম্পূর্ণ কাজের জন্য মনে মনে লজ্জা পেতো এবং নিজেকে ছোট মনে করতো, ব্যর্থ ভাবতো।
তাই একদিন সে মনিবের বাড়ী পৌঁছা মাত্র পানি বহনকারীকে বললো,
“আমি খুবই লজ্জিত যে আমার ত্রুটির কারণে আমি আমার কাজ সম্পূর্ণভাবে করতে পারি না।
আমার অর্ধেক পানি চুইয়ে চুইয়ে পড়ে যায় ফলে আপনি আপনার পরিশ্রমের পুরো ফল ভোগ করতে পারেন না।
এজন্য আপনার নিকট আমি ক্ষমাপ্রার্থী।”
তার কথা শুনে পানি বহনকারীর মনে দয়ার উদ্রেক হলো।
অনুকম্পার সুরে সে বললো,
“তুমি ফেরার সময় পথের ধারে ফুটে থাকা সুন্দর ফুলগুলিকে লক্ষ্য করবে।”
তার কথা মতো ফেরার পথে পাত্রটি খেয়াল করলো ফুলগুলো কী সুন্দর ফুটে আছে।
সারাটাদিন সূর্য তাদের আলো দিচ্ছে, ঊষ্ণতা দিচ্ছে।
তার কিছুটা ভালো লাগলো বটে কিন্তু পথের শেষে সে আবার মন খারাপ করে ব্যক্তিটির নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলো তার কাজের ব্যর্থতার জন্য।
ব্যক্তিটি তাকে বললো,
“তুমি কি লক্ষ্য করোনি ফুলগুলি শুধু তোমার পথের পাশেই ফুটে রয়েছে যা পথের অন্য ধারে নেই?
তোমার ত্রুটির জন্যই এটা সম্ভব হয়েছে।
আমি তোমার ত্রুটির কথা জানতাম আর তার পূর্ণ সুযোগ আমি নিয়েছি ।
তোমার পথের দিকেই শুধু আমি ফুলের চারাগুলি রোপণ করেছি এবং যাবার বেলা প্রতিদিন তোমাকে আমার কাঁধের একই দিকে বয়ে নিয়ে গেছি যাতে করে তুমি তাদের বেড়ে ওঠার জন্য পানি দিতে পারো।
বিগত দুই বছর ধরে এই ফুলগুলো দিয়েই আমি আমার মনিবের ঘরের টেবিল সাজিয়েছি, সৌন্দর্যমন্ডিত করেছি।
তুমি যেমন আছো তেমনই যদি না থাকতে তবে আমার মনিব তার গৃহের শোভা বাড়াতে এই সৌন্দর্য পেতো না।"
-------------------
সংযোজনীয় শিক্ষাঃ
সূর্যের মাঝে চাঁদের স্নিগ্ধতা নেই, আর চাঁদের মাঝে সূর্যের প্রখরতা নেই। সুতরাং অন্যকে দেখে অন্যের গুনে ঈর্ষান্বিত হয়ে নিজেকে অবমূল্যায়নের সুযোগ নেই।
একজন থেকে আরেকজন পার্থক্যের কারণেই আমরা আলাদা আলাদাভাবে এক ও অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।
বাঁচতে হবে স্বকীয়তা নিয়ে, জ্বলতে হবে আপন শক্তিতেই ...
Comments
Post a Comment